বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও কলামিস্ট সুব্রত বিশ্বাসের এবছর বইমেলায় প্রকাশিত দুটি বই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগদ্য গ্রন্থ ‘জন্মই আজন্ম লড়াই’ এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধের সংকলন ‘নির্বাচিত খবর’ এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল গত রবিবার জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে। মেরুন লাল ফয়েল পেপার দিয়ে মোড়ানো বই দুটির দুই দফায় মোড়ক উন্মোচন করেন আলোচক, প্রচ্ছদ শিল্পী ও বিশিষ্ট জনেরা। আলোচনায় প্রাধান্য পায় জন্মই আজন্ম লড়াই বইটি।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে কর্মরত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বেন’র সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম। নির্বাচিত আলোচক ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক অধুনালুপ্ত প্রবাসীর সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ, সাপ্তাহিক আজকাল’র প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ ও সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ। মঞ্চে আরো উপবিষ্ট ছিলেন এই বইএর লেখক সুব্রত বিশ্বাস এবং প্রচ্ছদ শিল্পী তাজুল ইমাম।
আলোচকবৃন্দ সুব্রত বিশ্বাসের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগদ্য গ্রন্থ ৫০ বছর পরে লেখা হলেও যেসব মুক্তিযোদ্ধা এখনো তাদের স্মৃতিকথা লেখেননি তাদের প্রতি অনুরোধ জানান যাতে তারা তাদের নিজেদের যুদ্ধের স্মৃতি লেখেন। তারা বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা তারা সকলেই তাদের স্মৃতিকথা লিখলে তবেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ ইতিহাস পাবো। আলোচকবৃন্দ বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি।
আলোচকবৃন্দ সুব্রত বিশ্বাসে স্মৃতিগদ্যের বিভিন্ন প্রসংগ তুলে ধরে বলেন, তিনি ৪৭এ দেশভাগের সময় থেকে সেই শৈশবেই সিলেট অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলমানের যে পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ তার আলামত লক্ষ্য করে প্রগতিশীল রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে রাজপথে অবস্থান নেন। একাত্তরে যুদ্ধে যেতেও দ্বিধা করেননি। এব বুক স্বপ্ন নিয়ে যে দেশ স্বাধীন করেছিলেন আজ তার পরিণতি দেখে ক্ষুব্ধ।
আলোচকরা বলেন, তার গদ্য চমৎকার। প্রকৃতি ও পরিবেশও যে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল এবং পাকিস্তানি হায়েনাদের নৃশংসতায় তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তারও বর্ণনা করেছেন চমৎকারভাবে। মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিগদ্য লেখার মুনশিয়ানায় বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে।
আলোচকবৃন্দ তার ‘নির্বাচিত খবর’ বইএর সমসাময়িক বাংলাদেশের, ভারতের ও প্রতিবেশী দেশসমূহের ঘটনা তুলে ধরার বিষয়টিও আলোচনায় নিয়ে আসেন।
সুব্রত বিশ্বাসের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগদ্যের শেষে ‘২৫ মার্চ রাত বারোটায় গ্রেফতার হওয়া বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এমন যুক্তি ও প্রমাণ ধোপে টেকে না’ বাক্যের প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার ৫টি প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়।
সভাপতির ভাষণে ড. নজরুল ইসলাম সুব্রত বিশ্বাসকে প্রকৃত রাজনীতিক হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি আজীবন রাজনীতিতেই আছেন। যদিও তিনি বলেছেন যে তিনি রাজনীতি ছেড়েছেন, কিন্তু রাজনীতি তাকে ছাড়েনি।
আলোচনার আগেই লেখক সুব্রত বিশ্বাস তার নিজের বই লেখার প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এবং অনুষ্ঠান চলাকালে সুব্রত বিশ্বাস এই বইতে স্বাক্ষর দেন। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন ওবায়দুল্লাহ মামুন।